ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিস্তারিত আলোচনা ২০২৫
ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিস্তারিত আলোচনা ২০২৫
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামী নির্দেশন ও অন্যতম ঐতিহ্য। ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই হলো কোরবানির তাৎপর্য। আমাদের মনে রাখতে হবে কোরবানির ফজিলত হাসিল করতে হলে মনের মাঝে সৃষ্টি করতে হবে সেই আবেগ অনুভূতি প্রেম ভালোবাসা যা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন আল্লাহর খলিল হযরত ইব্রাহিম আঃ।
কেবল গোস্ত বিলানো ও রক্ত প্রবাহিত করার নাম কোরবানি নয় বরং আল্লাহর রাস্তায় নিজের সম্পদের একটি অংশকে বিলিয়ে দেওয়ার দীপ্ত শপথের নাম কুরবানী। গোস্ত খাওয়ার নিয়াতে কোরবানি করলে তা আল্লাহতালার কাছে কবুল হবে না কেননা আল্লাহতালার কাছে গোস্ত ও রক্তের কোন মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল তাকওয়া পরহেজগারী ও ইখলাসের।এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন আল্লাহর কাছে কখনো জবাইকৃত পশুর গোস্ত ও রক্ত পৌঁছাবে না পৌঁছাবে কে বল তাকওয়া। সূরাঃ হজ।
সূচিপত্রঃঈদুল আযহা উপলক্ষে বিস্তারিত আলোচনা ২০২৫
.ঈদুল আযহার নামাজের সময়সূচী 2025
.কুরবানীর পশু কেনার প্রস্তুতি
.চাঁদ দেখার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার
.কুরবানী আল্লাহর জন্য মানুষ দেখানোর জন্য নয়
.কোরবানির চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট
.কোরবানি সম্পর্কে কিছু শিক্ষানিয় কথা
.কুরবানীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
.ঈদুল আযহার মাঝে মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক
.ঈদুল আযহা সম্পর্কে শেষ কথা
ঈদুল আযহার নামাজের সময়সূচী 2025
বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী ঈদুল আযহার জামাত প্রধানত একটাই হয়ে থাকে। আমরা জানি যে ঈদুল ফিতরের জামাত ১টা হতে ৫টা পর্যন্ত হয়ে থাকে আর সেই জামাত শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে শেষ হয় প্রায়১১.৩০মিনিটে।কিন্তু ঈদুল আযহা হয় তা হয় না কারণ কুরবানী আছে বলে। এজন্য সাধারণত ঈদুল আযহার জামাত সকাল ৭ টা থেকে৮টার মধ্যে শেষ হয় তারপর কুরবানীর কাজ শুরু করা হয়।
কুরবানীর পশু কেনার প্রস্তুতি
আমরা জানি সাধারণত জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় পশু কুরবানী করার জন্য গরু, ছাগল, উট, দুম্বাও ভেড়া ইত্যাদি পশু কুরবানীর জন্য নির্ধারিত করা হয়। এই কুরবানীর উৎপত্তি হয় আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সময় থেকে। যেকোনো পশু কেনার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা গরু ছাগল উট দুম্বা ও ভেড়া সবগুলোই কুরবানী দিতে পারি। তবে এই পশুগুলোকে ভালো করে নির্ধারণ করে নিতে হবে যে পশুর বয়স হয়েছে কিনা এবং পশুর কোন প্রকার খুঁত আছে কিনা। কারণ পশুর বয়স যদি না হয় এবং যদি কোন খুত থাকে তাহলে এই পশু কুরবানী হয় না। এজন্য আমরা কুরবানীর পশু দেখে শুনে নির্ধারণ করব।
চাঁদ দেখার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার
আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্যোতিষ্য বিদ্যার অগ্রগতির ফলে চাঁদ দেখার পূর্বাভাস এখন অনেক নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব।যদিও ইসলামে আরবি মাস ও চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ঈদুল আযহার তারিখ।আমরা সাধারণত জেনে থাকি যে ঈদুল আযহা জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ অনুষ্ঠিত হয়।
কুরবানী আল্লাহর জন্য মানুষ দেখানোর জন্য নয়
কুরবানী একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য। কিন্তু এখন সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা মানুষ দেখানোর জন্য কুরবানী করে। সমাজে অনেক বড় বড় মানুষ আছে যারা নিজেদের নিজেদের মাঝে বড় বড় গরু বা ছাগল নিয়ে রেষারেষি করে কে কত বড় পশু কিনতে পারে আর এই পশু কিনেই তারা কুরবানী দেয়। তাহলে এই কুরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তো হলো না অবশ্যই লোক দেখানো কুরবানী হলো।
কোরবানির চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট
একশ্রেণীর মানুষ আছে যাদের কাছে কুরবানী নিছক ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয়। কুরবানী উপলক্ষে মৌসুমী পশু ব্যবসা খারাপ কিছু নয় বরং নিয়ত ঠিক থাকলে তা এক বিরাট ইবাদাত। কিন্তু কোরবানি উপলক্ষে পশুর চামড়া নিয়ে তার সঙ্গে সুন্নাতে ইব্রাহিম এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। কোরবানির সময় প্রতিবছর আমাদের দেশে চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলে। এলাকায় দেখা যায় একশ্রেণীর মাস্তানের আনাগোনা। যাদের সামনে কথা বলার সাহস রাখেন না কোরবানি দাতারা।
এরা নিজেরাই চামড়ার দাম ঠিক করে দেয় এবং কোরবানিটা তারা তাতে বাধ্য হয় ওই দামে তাদের হাতে চামড়া তুলে দিতে হয়। অথচ কোরবানির চামড়ার হকদার এতিম মিসকিন গরিব মানুষরা। যারা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেয় কিংবা যারা চামড়া নিয়ে মাস্তানি করে তারা গরিবের হক নষ্ট করছে।এতিমের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। এটা জঘন্য অপরাধ। কিয়ামতের মাঠে তারা ছাড় পাবে না। স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা এতিম আর গরিবের পক্ষে যাদের হক আদায় ছাড়বেন অতএব চামড়ার সিন্ডিকেট কারীরা সঠিকভাবে চামড়ার ব্যবসায়ী নিয়োজিত হন।
কোরবানি সম্পর্কে কিছু শিক্ষানিয় কথা
খাটি নিয়ত সহকারে কোরবানি করা এবং তা থেকে শিক্ষা অর্জন করা। নিজেদের আনন্দে অন্যদের করা। মনে রাখতে হবে আল্লাহর রাস্তায় নিজের সর্বোচ্চ ত্যাগ করার নাম কোরবানি। এটা ব্যক্তিগত কোন ত্যাগের নাম নয়। এটা সামস্টিক ত্যাগের প্রতিফলন। যেমন হযরত ইব্রাহিম আঃ একা এই কাজে অগ্রসর হননি।
তার সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ এবং হযরত হাজেরা আঃ।এ থেকে প্রমাণিত হয় যে কোন মুসলমান শুধু একা আল্লাহর রাস্তায় ত্যাগের জন্য প্রস্তুতি নিলে হবে না তারা পুরো পরিবারকেও ত্যাগের এ পথে নিয়ে আসতে হবে। এটাই সুন্নাতে ইব্রাহিম তথা কোরবানির মর্ম কথা। কিন্তু আজ মুসলিম সমাজে কোরবানি চোখ আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে। আমরা ভুলে গেছি কোরবানির আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। লৌকিকতা আর আনুষ্ঠানিকতায় হারিয়ে গেছে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। কোরবানি এখন হয়ে গেছে কিছু মানুষের গরু প্রদর্শন নির্বাচনী প্রচার অভিযান আর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির হাতিয়ার।
এক কথায় কোরবানি এখন আর ট্যাগের শিক্ষায় মানুষকে উদ্ভাসিত করছে না বরং অহমিকা প্রদর্শনের মাধ্যম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে ঢোল বাধ্য সহকারে লাখ টাকায় কেনা গরু উট প্রদর্শনীর মিছিলের কাছে খিনো থেকে খিনতর হয়ে যাচ্ছে তালবিয়া ও তাকবীরের ধ্বনি।আমরা ভুলেই গেছি যে আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত রক্ত কিছুই পৌঁছায় না আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধুমাত্র তাকওয়া। সেই তাকয়ার চিত্র কি এমন কি হবে জবাব মনের মাঝে এসব বিষয় জাগ্রত না হলে প্রশ্ন উপস্থাপিত না হলে কি লাভ বছর বছর কোরবানি করে।
কুরবানীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
ঈদুল আযহার অনেক আগ থেকেই শুরু হয় পশুর হাট। বাজার ঘোরা নতুন পোশাক কেনা ও পশু কিনা ধুম। এই সময় বাংলাদেশ সহ মুসলিম দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়।
ঈদুল আযহার মাঝে মানুষের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক
বিষয়টি আমরা এইভাবে দেখতে পারি এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মাঝে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে উঠে এবং ইসলামের মহান ভ্রান্তিত্যবোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী ও গরিবের ব্যবধান তখন আর প্রাধান্য পায়না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করি নেই।এর ফলে ধনী গরিব শত্রু মিত্র আত্মীয়-স্বজন সবাই পরস্পর ভ্রান্তিত্যের চেতনায় উন্মুক্ত হয়ে থাকে।
ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য বরং মিলনের বাণী নিয়ে আসে। ঈদুল আযহা হয় যে কোরবানি দেওয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের পরীক্ষা হয় কারণ কোরবানির রক্ত গোস্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়। এই ঈদে আছে সাম্যের বাণী সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। টাই পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন এটাই ঈদের শিক্ষা ও সার্থকতা।
ঈদুল আযহা সম্পর্কে শেষ কথা
ঈদুল আযহা উৎসব মুসলিম সমাজে আত্মত্যাগ আল্লাহর প্রতি আনুগত্য মানবতার শিক্ষায় উদযাপিত হওয়ার একটি বিরাট উপলক্ষ। পবিত্র হজ্জ পালন এই সময়ে সম্পন্ন হয় যা ইসলাম ধর্মের অন্যতম পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url