হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবন কাহিনী

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবন কাহিনী

আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় রাসূল।



নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের জন্মগ্রহণ করেন। ডিনার পিতার নাম ছিলেন আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম ছিল আমি না  কুরাইশ বংশের নেতা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তার দাদা। তিনি প্রথমে তার দাদার বাড়িতে লালিত-পালিত হন। দাদা ইন্তেকালের পর তার চাচা আবু তালিব তার লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী সম্পর্কে এই আর্টিকেলের নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে


পেস সূচিপত্রঃবিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবন কাহিনী

..বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)জন্ম ও শৈশব

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)পেশা

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর হিলফুল ফুজুল গঠন

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)নবুওয়াত প্রাপ্তি

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)কাবাঘর সংস্কার

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)ইসলাম প্রচার

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)ইসরাও মেরাজ

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)মদিনা হিজরত

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)বহি বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)হজ ব্রত পালন

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)মক্কা বিজয়

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)এর ওফাত

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)জীবনী থেকে শিক্ষনীয় বিষয়


.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)জন্ম ও শৈশব

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আরব দেশের মক্কা নগরে কুরাইশ গোত্রের বনি হাসিম বংশের ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে রবিউল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল্লাহ তার জন্মের পূর্বেই ইন্তেকাল করেনএবং মাতা আমিনা তার জন্মের ছয় বছর পরে মৃত্যুবরণ করলে তিনি পিতা মাতা হারিয়ে এতিম হন। পিতা মাতার অবর্তমানে দা আব্দুল মোতালিব এর কাছে প্রতিপালিত হওয়ার আট বছর পর তার দাদাও ইন্তেকাল করেন।

 এরপর শিশু অবস্থায় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তার চাচা আবু তালেব। তৎকালীন আরবের রীতি  অনুযায়ী মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়া সন্তান বেড়ে ওঠার মাধ্যমে তার সুস্থ দেহ ও সুঠাম গঠনের জন্য মরুভূমি বেদুইন মহিলাদের কাছে দুধ পান করানোর জন্য দিয়ে দিতেন এবং পরে আবারো ফিরিয়ে নিতেন।এই রীতি অনুযায়ী শিশু মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে দুধ মা  হালিমার নিকট দেওয়া হতো। তাকে ঘরে আনার পর মা হালিমার সংসারে ওদের উন্নতি সাধিত হয়। তিনি মা হালিমার একটি স্তন পান করতেন এবং অপরটি তার দুধ ভাই এর জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর প্রতি পালনের পর তাকে মা আমিনার নিকট ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মক্কা মহামারীর কারণে আবার তাকে দুধ মা হালিমার নিকট পাঠানো হয়। দুধ মা হালিমা অবশ্য এটাই  মনে মনে কামনা করেছিলেন।

 এই ঘটনার পরেই দুধ মা হালিমা তাকে মা আমিনার নিকট ফিরিয়ে দেন। এভাবে ছয় বছর পর্যন্ত মা আমিনার কাছেই তিনি প্রতিপালিত হয়। এই সময় মা আমিনা স্বামীর কবর জিয়ারত ও নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তার শশুর আব্দুল মোত্তালেব শিশু মোহাম্মদ চালাও আলাই সালাম ও দাস আয়মনকে সঙ্গে নিয়ে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে মক্কা হতে মদিনায় গমন করে। মক্কা থেকে ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে এসে মা আমিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আর সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মা আমিনার ইন্তেকালের পরে দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাকে লালন পালন করে। কিছুদিন পর দাদার মৃত্যু হলে তার চাচা আবু তালেব তাকে প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন। তার চাচা আবু তালেব ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। এভাবেই তার শৈশবকাল ও বেড়ে ওঠা হয়।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)পেশা

অনেকের মতে তরুণ বয়সে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কোন পেশা ছিল না তবে তিনি বকরি উট চড়াতেন বলে জানা যায়। তিনি যে বকরি বা উট চরাতেন তা ছিল বনি সাদ গোত্রের। এরপর তিনি ব্যবসা শুরু করেন এতে তিনি  অধিক সততার পরিচয় দেন বলে তাকে সবাই আল সাদিক ও আলামিন উপাধি দিয়েছিলেন যার বাংলা অর্থ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী তিনি বসরা বাহারাইন ও ইয়েমেন সফর করেন। তার ব্যবসার অগ্রগতি দেখে হযরত খাদিজা রাজি আল্লাহু তালহা আনহু তার কিছু পণ্য দিয়ে বসরা পাঠান। পরবর্তীতে খাদিজা (রাঃ)মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রতি অত্যান্ত মুগ্ধ হয় এবং তাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব পাঠালে তিনি চাচা আবু তালিব এর সাথে পরামর্শ করে উত্তর জানান। এরপরে উভয় বিবাহ কার্য সম্পূর্ণ হয়। তখন খাদিজা রাজি আল্লাহু তায়ালা আনহু এর বয়স ৪০ বছর এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫ বছর।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর হিলফুল ফুজুল গঠন

আরবরা ছিল যুদ্ধবাজ জাতি। ঠুনকো ঠুনকো বিষয় নিয়ে তারা বিবাদে  লিপ্ত হতো। যুগের পর যুগ এ যুদ্ধ চলতে থাকতো। শত শত মানুষ এই যুদ্ধে প্রাণ হারা তো। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর তরুণ বয়সে হিলফুলফুজুল নামের শান্তি সংঘ গঠন করে তিনি এসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। যার মৌলিক স্লোগান ছিল আত্রের সেবা করা। অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা। অত্যাচারিত কে সহযোগিতা করা। শান্তির শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং গোদ্রীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা। মানুষের কল্যাণে তার গড়া প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।



.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)নবুওয়াত প্রাপ্তি

৩০বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর হতে নবী মোহাম্মদ সালাহ সালাম হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান মগ্ন অবস্থায় আল্লাহর এবাদত করতেন। এই সময় খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তার খাবার দিয়ে আসতেন। এমনই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় একদিন ফেরেশতা জিব্রাইল ৷  ( আঃ) আল্লাহ পাকের কালাম নিয়ে হাজির হন। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম উক্ত কালাম পাঠ করতে বলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম করতে পারেনা বলে জানান। তারপর জিব্রাইল আলাইহিস সালাম মোহাম্মদ সালাল্লাহু সাল্লামকে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলে তিনি পাঠ করতে পারেন না বলে আবারো জানান। এইভাবে তিনবার জিব্রাইল ফেরেশতা তার বুকের সাথে চাপ দিয়ে ধরার ফলে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই আয়াত
 পড়তে শুরু করেন।

সূরা আলাকের প্রথম হতে পা আয়াত পর্যন্ত সর্বপ্রথম মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর নাযিল হয়। যার বাংলা অর্থ হলো ্পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে পড়ো আর তোমার রব মহাময়িন যিনি কলবের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। এই প্রথম ফেরেশতা জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর আগমনে এতটাই ভীত হন যে কাঁপতে কাঁপতে স্ত্রী খাদিজার নিকট এসে তাকে কম্বল দিয়ে আবৃত করার কথা বলে। ৪০ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। এই সময় হতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ওপর নিয়মিত আসতে থাকে। এভাবেই জিব্রাইল( আ)এর মাধ্যমে নবী মোহাম্মদ সাঃ এর ওপর পূর্ণ ৩০ পাড়া কুরআন নাযিল হয়।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)কাবাঘর সংস্কার

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর যখন ৩৫ বছর বয়স তখন তিনি কাবাঘর সংস্কারে আত্মনিয়োগ হন।পুরাতন কাবাঘর ভেঙ্গে নতুন কাবাঘরের কাজ শেষ হওয়ার পর হাজরে আসওয়াদ পাথর বসানো নিয়ে সব গোত্রের মানুষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধটি এমন এক পর্যায়ে রূপ নেই যে, শেষ পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধার উপক্রম হয়। কাবাঘর নতুন ভাবে নির্মাণের কাজ সব গোত্রের মানুষের উপর সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ বসানোর কাজ কোন গোত্রের লোকে দেওয়া হয়নি বলে সব গোত্রের লোক এই কাজটি দাবি করেন।


 অবশেষে আবু উমাইয়া মকযুমী  এই মতামত দেন যে আগামীকাল সকালে যে সবার প্রথমে কাবা ঘরে প্রবেশ করবে তার কথা অনুযায়ী হাজরে আসওয়াদ পাথর টি পূর্ণনির্মাণ করা হবে আর তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে।  পরের দিন সকালে সর্বপ্রথম কাবা ঘরে প্রবেশ করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। আবু উমাইয়া মকজুমীর কথা অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাজের সিদ্ধান্তকারী। তখন হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই সিদ্ধান্ত নেন যে একটি চাদরের ওপর হাজরে আসওয়াদ পাথরটি রেখে উক্ত চাদরের কোনাই গোত্রের প্রধানগণ ধরে কাবা ঘরে নিয়ে যাবে। এরপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাজরে আসওয়াদ পাথর টিকে দেওয়ালে স্থাপন  করবে। এই কাজটি করার ফলে কারো মধ্যে আর কোন বিরোধ থাকল না এবং কাজটি করে সবাই সন্তুষ্ট থাকলো।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)ইসলাম প্রচার

নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সর্বস্তরের মানুষের কাছে ইসলাম ধর্ম পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। তৎকালীন সময়ে আরবেদের মাঝে ইসলাম প্রচার করা তথ্য ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার মোটেও সহজ কাজ ছিল না। ওই সময় আরবের বিধর্মীরা ছিল প্রভাবশালী। তারা বিভিন্ন দেবদেবী ও মূর্তি পূজায় লিপ্ত থাকতো।তাদের চিরাচরিত এই বিশ্বাসের ভীত ভেঙে ইসলাম গ্রহণে অনুপ্রানিত করা ছিল অনেক কঠিন কাজ।  তারপরও তিনি বসে না থেকে পূর্ণ দমে ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। প্রথমে তিনি তার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের মাঝে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বিবি হযরত খাদিজা (রাঃ)।পরবর্তীতে তার প্রতিপালিত চাচাতো ভাই হযরত আলী (রাঃ)ইসলাম গ্রহণ করে। তখন হযরত আলীর বয়স মাত্র 10 বছর। ইসলামকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রথমে তার বংশের সবাইকে নিয়ে একটি সভা করেন। কিন্তু কেউ তার এই দাওয়াত কবুল করে না। এই সভায় শুধুমাত্র একজনই ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি হলেন হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ)।এইভাবে তিনি তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচারের পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে এখন প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের কাজ করা যায়। প্রথমে তিনি সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে সবাইকে সমবেত করে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। এরপর থেকেই ইসলামের শত্রু বাড়তে থাকে। 

ইসলামের বিরুদ্ধে যখন চরম আকার ধারণ করে তখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কিছু সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি প্রদান করে। ইসলাম ও নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর চরম শত্রু ছিলেন তার নিজের চাচা আবু জাহেলও ওমর। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সব সময় চাইতেন তারা যেন ইসলাম গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যে হযরত ওমর ইসলাম গ্রহণ করলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ইসলাম প্রচার করা আরো সহজ হয়ে যায়। এরপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর চাচা আমির হামজা ইসলাম গ্রহণ করার হলে ইসলাম প্রচার আরো গতিশীলতা আসে।  এইভাবে ইসলাম প্রচার চলতে থাকার এক পর্যায়ে মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সহ বনে হাশেম গোত্রের সবাইকে তিন বছর এক ঘরোয়া করে রাখে। তিন বছর অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হওয়ার পরের বছরই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর স্ত্রী হযরত খাদিজা ও চাচা  আবু তালিব ইন্তেকাল করলে হযরত মোহাম্মদ সাঃ ইসলাম প্রচারে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়    

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)ইসরাও মেরাজ

এক রাতে মক্কার মসজিদুল হারাম হতে বোরাক নামক একপ্রকার বাহনের মাধ্যমে নবী মোহাম্মদ সাঃ কে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা নিয়ে যাওয়া হয়। এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। মসজিদুল আকসায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নবীগণের সাথে পরিচিত হন এবং সেখানে তিনি জামাতে নামাজ আদায়ের সময় ইমামতি করেন। এরপর বিশেষ বাহনের মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে উর্ধাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ভ্রমণ ইতিহাসে মেরাজ নামে অভিহিত হয়। তারপর তিনি একে একে বেহেশত দোযখ সহ আল্লাহ পাকের সৃষ্টি জগতের সকল কিছু অবলোকন করেন। মেরাজ চলাকালীন সময়ে পৃথিবীতে কোন সময় অতিবাহিত হয় নাই।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)মদিনা হিজরত

একদিকে মক্কার কুরাইশ দের অত্যাচারের মাত্রা ক্রমাগত ভাবে বাড়তে বাড়তে শেষ পর্যন্ত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবন নাসের পর্যায় চলে আসে। অপরদিকে মদিনায় আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়  দীর্ঘদিন যাবত গোত্র  ভিত্তিক জন্ম কলহ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সব সময় লিপ্ত থাকতো। এই অবস্থা হতে তারা নিজেরাই পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কোন এক তৃতীয় নেতৃত্বের সহযোগিতা কামনা করছিল। বিশেষ করে তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মদিনায় আগমনের প্রত্যাশা করছিল। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে নবীজি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ৬৬২ খ্রিস্টাব্দে এক রাতে একান্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি হযরত আবু বক্করকে সঙ্গে নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর মক্কা জীবনের অবসান ও মদিনার জীবন শুরু হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনায় বিবাদমান সকল গোত্রের লোকদেরকে একত্রিত করেন এবং সকল বিবাদ ভুলে তারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।

 নবীজি সালালা ওয়ালিও সালাম মদিনা বাসীদের নিয়ে একটি মদিনা রাষ্ট্র গঠন করেন। মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মদিনা সনদ নামে একটি দলিল তৈরি করেন এবং তাতে সকলের স্বাক্ষর করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ইহাই প্রথম সংবিধান। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনা রাষ্ট্রের প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন মক্কার কুরাইশরা মদিনা রাষ্ট্র ধ্বংস করার জন্য বারবার চেষ্টা করে কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দূরদর্শিতায় তা ব্যর্থ হয়। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর নামক স্থানে মক্কার কুরাইশ বাহিনীর সাথে নবীজি (সাঃ)অনুগত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেন। ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে উহুদের যুদ্ধে নবীজি সাঃ এর সৈন্যদল বিজয় লাভ করে। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে আবু সুফিয়ান একদল সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হলে খন্দক নামক স্থানে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দল বিজয় লাভ করে। ক্রমাগতভাবে নবীজি সালাম এর বিজয়ের ফলে মুসলমানেরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে মদিনার ভেতর হতে ইহুদিদের বের করে দিয়ে মদিনার আশেপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন এতে নিরাপদ মদিনা কায়েম হয়।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)বহি বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব এবং বিশ্বজাহানের একমাত্র পথপ্রদর্শক ও বিশ্ব মানবতার কান্ডারী। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শুধুমাত্র মক্কা ইসলাম প্রচার করে বসে থাকেন নাই বরং বইয়ের বীরশে ও ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। তিনি সরস্য,রোম,ও আফ্রিকার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দুধ প্রেরণ করেন। যার প্রতিশ্রুতি তে আজ আমরাও ইসলাম ধর্ম পেয়েছি।



.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)হজ ব্রত পালন
পবিত্র কুরআন শরীফে হজ পালনের কথা উল্লেখ থাকলেও মক্কার কুরাইশদের কারণে মুসলমানরা হজ পালন করতে পারছিলেন না।এরই মধ্যে একদিন হযরত মুহাম্মদ সাঃ দিবা দর্শনে হজ পালন করার জন্য কামানো দেখতে পান। এ কারণেই তিনি হজ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে ১৪ শত সাহাবী নিয়ে বিজি মদিনা হতে মক্কায় হজ পালনের জন্য রওনা হন। এতে কুরাইশরা বাধা প্রদান করলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মক্কার অদূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এখানে জিলকত মাসে মুসলমানদের সাথে  কুরাইশদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা হুদাই বিয়া সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধির শর্তা অনুযায়ী নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সেই বছর লোকজন নিয়ে হজ না করে মদিনায় ফিরে যান। যদিও এই সন্ধির অনেক শর্তই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ছিল তথাপিও ভবিষ্যৎ কল্যাণের আশায় নবীজি সাঃ তা মেনে নেন।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)মক্কা বিজয়

হুদাই বিয়ার সন্ধি দশ বছর মেয়াদী হলেও তা দুই বছর পর ভেঙে যায়। আরবের জোয়া গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র। এক রাতে খোজায়া গোত্রের উপর বকর গোত্র আমলা চালায় এ হামলায় কুরাইশরা বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। এমনকি কুরাইশদের যুবক এ হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ একটি করে। নবীজি সাঃ কুরাইশদেরকে উক্ত পত্রের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি মেনে নিতে বলে। 

শর্ত তিনটি হলঃ

১.কুরাইশরা খোজায়া গোত্রের নিহতদের রক্তপন শোধ করবে অথবা
 
২.তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মন্ত্রি যুক্ত বাতিল করবে অথবা
 
৩. তারা এ ঘোষণা দিবে যে হুদায়বিয়ার সন্দীপ বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

 কুরাইশরা তৃতীয় শর্তটি মানার কথা জানায়। কিন্তু পরবর্তীতে কুরাইশগণ তাদের সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করে তারা আবার আবু সুফিয়ান কে চুক্তিনবায়ন করার জন্য মদিনায় পাঠান। কুরাইশদের এই প্রস্তাব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম প্রত্যাখান করেন এবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম দশ হাজার সাহাবী নিয়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। দিনটি ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের ১০ তারিখ। মোটামুটি বলা যায় বিনা প্রতিরোধে মক্কা বিজয় সংঘটিত হয়। মক্কা নগরের 10 জন ব্যতীত সবাইকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ক্ষমা ঘোষণা করেন। পরে ওই ১০ জনের মধ্যে আরো কয়েকজনকে ক্ষমা করেন। বাকিদের ক্ষমা না করার কারণ হলো তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সম্পর্কে কুৎসা রটার ছিল। মক্কা বিজয় করে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রথমেই কাবা গৃহে প্রবেশ করে কাবা গৃহের সকল মূর্তির অপসারণ করেন। মুসলমানদের অগ্রগতি ও নবীজি সাঃ এর ক্ষমার নির্দেশন দেখে মক্কার অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করে।

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)এর ওফাত

নবীজি সাঃ মক্কা হতে বিদায় হজ শেষে মদিনায় আসেন।।মদিনায় আসার পর হিজরে ১১ সালের সফর মাসে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের মাত্রা অধিক হওয়ায় নবীজির পাগড়ির ওপর দিয়ে উষ্ণতা অনুভব করা যাচ্ছিল। তার এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদী নারীর বিষ মিশানো খাবার খাওয়ার ফলে। অসুস্থ অবস্থায় তিনি ১১ দিন নামাজে ইমামতি করেন। ক্রমশ অসুস্থতা তীব্র হওয়ায় তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশার গৃহে অবস্থান করেন। এ সময় তার কাছে মাত্র ৭ থেকে ৮ দিনার ছিল। তিনি তাও অফাত এর আগের দিন দান করে দেন। অবশেষে ১১ সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি ওফাত লাভ করেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে গোসল করান হযরত আলী রাঃ এবং স্ত্রী আয়েশার ঘরে যেখানে অবস্থান করতেন সেখানেই তাকে সময় তো করা হয়। 

.বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)জীবনী থেকে শিক্ষনীয় বিষয়

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সমগ্র জীবন বিশ্লেষণ করলে প্রতিীয়মান হয় যে, মানুষের প্রার্থীব ও পরলৌকিক জীবনের জন্য যে সকল আদর্শ থাকা প্রয়োজন তার সবকিছুই ছিল নবীজি সাঃ এর জীবন আদর্শের মধ্যে। তার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, ও রাষ্ট্র পরিচালনা তথা সকল ক্ষেত্রে তিনি উত্তম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তিনি দীনহীন জীবন যাপন করলেও কোনদিন কারো কাছে হাত পাতেন নাই 


দান  ছিল তাই তিনি ছিলেন উত্তম উদাহরণ। চরমভাবে অত্যাচারিত হয়েও তিনি কাউকে কোনদিন অভিশাপ দেননি বা কাউকে গালমন্দ করেনি। অতি ছোটবেলা হতেই তিনি ছিলেন বিনয়ী নম্র  ও শান্ত প্রকৃতির সর্বোত্তম একজন মানুষ। সততা সত্যবাদিতা ও ন্যায় বিচারে তিনি ছিলেন সবসময় অবিচল। ক্ষমার উত্তম দৃষ্টান্তও দেখিয়েছেন নবীজি সাঃ।সুতরাং সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী মোহাম্মদ সাঃ এর জীবন আদর্শই আমাদের জন্য উত্তম শিক্ষা। এই শিক্ষায় যেন আমাদের সকলের জন্য উত্তম পাথেয় হয়ে থাকে ইনশাআল্লাহ..........



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url